Summary
এই পাঠে চিনির শরবতের উপাদান ও দ্রবণের বৈশিষ্ট্যের উপর আলোচনা করা হয়েছে। দ্রবণ হলো একটি মিশ্রণ, যেখানে পানির মতো দ্রাবক বেশি এবং চিনির মতো দ্রব কম থাকে। দ্রাবক হলো যে উপাদানটি বেশি পরিমাণে থাকে এবং দ্রব হলো যা কম পরিমাণে থাকে। চিনির শরবতে পানি দ্রাবক এবং চিনি দ্রব।
দ্রবণের ঘনমাত্রা: দ্রবণকে পাতলা বা ঘন বলা হয় দ্রব এবং দ্রাবকের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরূপ, এক গ্লাসে ১ চামচ চিনি এবং অপর গ্লাসে ৩ চামচ চিনি দিলে দ্বিতীয়টি বেশি মিষ্টি হয়ে ঘন দ্রবণ হবে।
রঙিন দ্রবণের পার্থক্য: রঙহীন দ্রবণ থেকে ঘনত্ব নির্ধারণ করা কঠিন, কিন্তু রঙিন দ্রবণের ক্ষেত্রে তুঁতের পরিমাণ বাড়ালে রংও গাঢ় হয়।
প্রস্তুতির পদ্ধতি: বিভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ তৈরি করার জন্য উপকরণ যেমন চিনির শরবত এবং রঙিন দ্রবণ প্রস্তুতি বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে।
সংকেত: রাসায়নিক দ্রবণের স্বাদ পরীক্ষা করার আগে অবশ্যই যথাযথ তথ্য থাকা জরুরি, কারণ কিছু রাসায়নিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তোমরা বলতো চিনির শরবতে চিনি ও পানির মধ্যে কোনটি বেশি এবং কোনটি কম থাকে? নিঃসন্দেহে পানির পরিমাণ বেশি আর চিনির পরিমাণ কম থাকে। এখানে পানি চিনিকে দ্রবীভূত করেছে আর চিনি পানিতে দ্রবীভূত হয়েছে। দ্রবণে সাধারণত যেটি বেশি পরিমাণে থাকে অর্থাৎ দ্রবীভূত করে, তাকে বলে দ্রাবক আর যেটি কম পরিমাণে থাকে অর্থাৎ দ্রবীভূত হয় তাকে বলে দ্রব। তাহলে বলা যায় যে,
| দ্রবণ = দ্রব + দ্রাবক |
চিনির শরবতে দ্রাবক হলো পানি আর দ্রব হলো চিনি।
জলীয় দ্রবণ
উপরে দেওয়া চিনির শরবতের মতো জলীয় দ্রবণে পানি দ্রাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সকল দ্রবণের ক্ষেত্রেই দ্রাবক যে পানি হবে তা কিন্তু নয়। পানি ছাড়াও বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক বস্তু যেমন এসিটোন, স্পিরিট, ইথারও দ্রাবক হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
দ্রবণের ঘনমাত্রা: পাতলা ও ঘন দ্রবণ
দ্রবণে দ্রব ও দ্রাবকের পরিমাণ কম-বেশি করে ভিন্ন ভিন্ন ঘনমাত্রার দ্রবণ তৈরি করা যায়। ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে দ্রবণকে পাতলা বা ঘন বলা হয়। এবার তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ঘনমাত্রার দ্রবণ তৈরি করা যাক।
কাজ: ঘন ও পাতলা দ্রবণ তৈরি ও পার্থক্যকরণ। প্রয়োজনীয় উপকরণ: দুটি কাচের গ্লাস, মাপচোঙ, চামচ, চিনি ও পানি।
|
যে গ্লাসে ৩ চামচ চিনি দেওয়া হয়েছে, সেটি বেশি মিষ্টি লাগছে। চিনির শরবতের মতো সমান আয়তনের দ্রবণের ক্ষেত্রে যেটিতে দ্রবের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, সেটি ঘন দ্রবণ আর যেটিতে তুলনামূলকভাবে দ্রবের পরিমাণ কম থাকে, সেটি হলো পাতলা দ্রবণ।
আবার যদি এমন হয় যে, দুটি শরবতে চিনির পরিমাণ একই রেখে (যেমন: ১ চামচ) ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ পানি নেওয়া হয় তবে যেটিতে পানির পরিমাণ কম থাকবে সেটি বেশি মিষ্টি হবে অর্থাৎ এটিকে আমরা ঘন দ্রবণ বলতে পারি। আর যেটিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকবে, সেটি কম মিষ্টি হবে অর্থাৎ সেটিকে আমরা পাতলা দ্রবণ বলতে পারি।
বর্ণহীন জলীয় দ্রবণ দেখে এটি পাতলা না ঘন তা বুঝার উপায় নেই। তবে রঙিন দ্রবণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ঘনমাত্রার দ্রবণসমূহ কোনটি পাতলা, কোনটি ঘন তা বোঝা যায়, ঠিক যেমন করে আমরা পাতলা ডাল ও ঘন ডালের পার্থক্য করতে পারি (উল্লেখ্য, ডাল কিন্তু দ্রবণ নয়, একটি অসমসত্ত্ব মিশ্রণ)। এখন আমরা দেখব কীভাবে ঘন ও পাতলা রঙিন দ্রবণের পার্থক্য করা যায়।
কাজ: ভিন্ন ভিন্ন ঘনমাত্রার রঙিন জলীয় দ্রবণ তৈরি করে তা থেকে ঘন ও পাতলা দ্রবণের পার্থক্যকরণ। প্রয়োজনীয় উপকরণ: তিনটি টেস্ট টিউব, টেস্টটিউব ধারক, মাপচোঙ, চামচ, তুঁতে ও পানি।
পদ্ধতি: তিনটি পরিষ্কার টেস্টটিউব নাও। এবার টেস্টটিউবগুলোকে টেস্টটিউব-ধারকে পরপর সাজিয়ে রাখ। প্রতিটি টেস্টটিউবে মাপচোঙ দিয়ে মেপে ৫ মিলিলিটার করে পানি নাও। প্রথম টেস্টটিউবে ১ চামচ, দ্বিতীয় টেস্টটিউবে ২ চামচ ও অপরটিতে ৩ চামচ তুঁতে যোগ করে তুঁতের দানাগুলো পুরোপুরি পানিতে দ্রবীভূত না হওয়া পর্যন্ত ভালো করে ঝাঁকাও। টেস্টটিউবগুলোকে টেস্টটিউবধারকে যার যার জায়গায় আগের মতো সাজিয়ে রাখ। |
তোমরা সবগুলো দ্রবণ কি সমান নীল দেখতে পাচ্ছ? না, তা নয়। যেটিতে সবচেয়ে কম পরিমাণ তুঁতে যোগ করেছ, সেটি সবচেয়ে কম নীল দেখাচ্ছে। অর্থাৎ সেটি সবচেয়ে পাতলা দ্রবণ। এভাবে তুঁতের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে দ্রবণের রং আস্তে আস্তে গাঢ় হয়েছে অর্থাৎ দ্রবণের ঘনমাত্রা পাতলা থেকে ঘন হয়েছে। একই ভাবে তোমরা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও পটাসিয়াম ডাইক্রোমেটের দ্রবণ তৈরি করে পাতলা ও ঘন দ্রবণের পার্থক্য করতে পার।
Read more

